অজয় বৈদ্য অন্তর :: ‘কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও/তারি রথ নিত্য উধাও/জাগিছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন/চক্রে পিষ্ট আধারের বক্ষ-ফাটা তারার ক্রন্দন/ওগো বন্ধু…..বিদায়। সময় থাকলে ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনাবলী লেখা হয় সময়ের ডায়েরিতে। কিছু প্রত্যাশার অপূরণ,কিছু প্রাপ্তি আবার না পাওয়ার বেদনাও সময়ের এ্যালবামে যেমনভাবে বর্ণিত হয়,একইভাবে কিছু মানুষের বিয়োগ ব্যথাও বুকের গভীরে এক ক্ষতের সৃষ্টি করে। নতুন উদ্দ্যমে ফের শুরু হয় মহাকালের স্রোত।
কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেল আরও একটি বছর। ২০২১’ কাটিয়ে মহাকালের পথে শুরু হল নতুন বছর ‘২০২২’। গেল বছরের কিছু আলোচিত ঘটনা দাগ কাটবে নতুন বছরেও। তবুও প্রত্যাশায় যুক্ত হবে নতুন পালক। নতুন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে বিলীন হয়ে যাবে ঘটনাবহুল ২০২১।
২০২১ সালের বিদায়ী বছরে কিছুটা প্রাপ্তি যোগ হয়েছে সিলেটে। আবার নানা ঘটনায় সমালোচিত হয়েছে এই নগরী। নানা ঘটনায় উত্তপ্তও ছিল সিলেটের রাজনীতি। অধিকার আদায়ে নাগরিক বিক্ষোভও হয়েছে সমানতালে। তাছাড়া, সর্বনাশা মরণঘাতি করোনা ভাইরাসে সিলেটের রাজিৈনতক অঙ্গণেও শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে বছর জোড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ঘনঘন ভূমিকম্প।
হারিয়েছি যাদের : মরণঘাতি করোনা ভাইরাসের আক্রমণে জীবনপ্রদীপ নিভে গেছে সিলেটের অনেক বিশিষ্টজনদের। আবার অনেকেই স্বাভাবিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, লেখক, সাংবাদিকসহ নানা পেশার মানুষ। করোনায় আক্রান্ত, করোনা-পরবর্তী জটিলতা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন সংসদ সদস্য মাহমুদুস সামাদ চৌধুরী কয়েস, দিলদার হোসেন সেলিম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট লুৎফুর রহমান, সাংবাদিক আজিজ আহমদ সেলিম সহ অসংখ্য গুণিজন। এতে সিলেটে তৈরি হয়েছে শূন্যতা।
দফায় দফায় ভূমিকম্প : বিদায়ী বছরের ২৯ মে সকালে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাঁচ দফা ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে পুরো সিলেট। এর প্রায় ৮ দিন পর ৭ জুন সন্ধ্যায় আরও দুই দফা ভূমিকম্প হয়। বিশেষজ্ঞরা সিলেটকে ভূমিকম্পের ডেঞ্জারজোন আখ্যা দিলেও মোকাবেলায় প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল বছরজোড়ে। মে মাসের কয়েকদফা ভূমিকম্পের পর নগরের ৬টি বিপনীবিতানকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে বন্ধ করে দেয় সিটি করপোরেশন। তবে কোনো সংস্কার ছাড়াই কিছুদিন পর তা আবার চালু হয়ে যায়। এরপর নগরে ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রকাশ করে সিলেট সিটি করপোরেশন। সেগুলো পর্যায়ক্রমে ভেঙে ফেলা হবে বলেও জানানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত একটিও ভাঙা হয়নি। এরপর সিলেটের ৪২ হাজার বহুতল ভবনের ভূমিকম্পের সহনীয়তা পরীক্ষার উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। সেটিরও বাস্তবায়ন হয়নি।
সিসিকের কর্মকাণ্ড এবং নাগরিক ভোগান্তি: নির্বিচারে গাছ কাটা, পীর হবিবুর রহমান পাঠাগার,পানির বিল দ্বিগুণ বাড়ানো, পুকুর ভরাট, অপরিকল্পিত ও অরক্ষিত উন্নয়নসহ নানা কারণে বছরজুড়ে নগরবাসী ক্ষুব্ধ ছিল সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) কর্মকাণ্ডে। বছরের বিভিন্ন সময় নগরের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, সড়ক সংস্কার, ড্রেন নির্মাণের কাজ চলেছে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। আম্বরখানা এলাকায় খোলা ড্রেনে পড়ে কবি বাছিত মোহাম্মদের মৃত্যু এ বছর আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। সড়ক সম্প্রসারণের জন্য গত অক্টোবরে নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকার দুই শতাধিক গাছ কাটা হয় বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। গত ১ জুলাই থেকে পানির বিল দ্বিগুণ করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন। তবে তা জানাজানি হয় সেপ্টেম্বরে। সিসিকের এমন সিদ্ধান্তে নগরবাসী প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। ক্ষোভের মুখে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী পানির বিল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।
খুনের সংখ্যা বৃদ্ধি: বিদায়ী বছরের অন্তত অর্ধশতাধিক হত্যার ঘটনা ঘটে। মার্চ ও এপ্রিলে সবচেয়ে বেশি ৩২টি হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র এপ্রিল মাসেই ১০টি হত্যা হয়। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) হবিগঞ্জ শহরের প্রধান সড়কে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট সাইফুল ইসলামকে প্রকাশ্যে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। একইদিনে সুনামগঞ্জের ছাতকে নাতির হাতে দাদী খুনের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।
সিলেট পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত জেলা পুলিশের ১১টি থানায় ৩১৬টি হত্যা মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ১ জুন থেকে ২০১৮ সালের ১৭ জুন পর্যন্ত ১১৭টি হত্যা মামলা হয়। ২০১৮ সালের ১৮ জুন থেকে ১৭ জুন ২০১৯ পর্যন্ত ৮৫টি হত্যা মামলা, ১৮ জুন ২০১৯ থেকে ১৭ জুন ২০২০ পর্যন্ত ৫৩টি হত্যা মামলা এবং ২০২০ সালের জানুয়ারী থেকে থেকে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত মোট ৮০টি হত্যা মামলা হয়েছে। অধিকাংশ খুনের ঘটনা পারিবারিক কলহ, জমিজমা ও ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে সংগঠিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিএনপি নেতা জামানের পদত্যাগ : এডভোকেট সামসুজ্জামান জামান। বিএনপি’র আলোচিত নেতা। নানা চড়াই-উৎরাইয়ের পর সিলেট বিএনপি’র রাজনীতির একাংশের নিয়ন্ত্রণ তার হাতেই। সেই জামানই ২০২১ সালের শেষের দিকে পদত্যাগ করলেন দল থেকে। এজন্য তাকে নিয়ে নানা আলোচনা, জল্পনার শেষ নেই সিলেটে। জামানের বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় চলে।
শাল্লায় সাম্প্রদায়িক তাণ্ডব : সুনামগঞ্জের শাল্লার উপজেলার নোয়াগাও নামের সাম্প্রদায়িক তান্ডব বছর জোড়ে ছিল আলোচনায়। একটি প্রত্যন্ত গ্রামে গত মার্চে ঘটে যায় সাম্প্রদায়িক তাণ্ডব। দেশজুড়ে আলোচিত হয় এ ঘটনা। হেফাজতে ইসলামের সাবেক নেতা মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে ঝুমন দাস নামে এক যুবক স্ট্যাটাস দেয়। এর জেরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাত চালানো হয় হিন্দু অধ্যুষিত নোয়াগাও গ্রামের অন্তত ৯০টি বাড়িতে। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে মামুনুলের সমালোচনা করা ঝুমন দাস ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জেল খেটে প্রায় ৭ মাস পর গত অক্টোবরে জামিনে মুক্ত হন। এই হামলার ঘটনায় তিনটি মামলা করা হয়। হামলা মামলার প্রধান অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম স্বাধীনসহ (স্বাধীন মেম্বার) কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। তবে ঝুমনের আগেই তারা সবাই জামিনে মুক্তি পান। মামলাগুলো এখন সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। আর ঝুমনের বিরুদ্ধে করা ডিজাটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা হস্তান্তর করা হয়েছে সিলেটের সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে।
‘নয়া দামান’ নিয়ে উন্মাদনা : এ বছরের শুরুর দিকে সিলেটের একটি বিয়ের গান রীতিমতো ঝড় তোলে। সবার মুখে মুখে ঘুরতে থাকে মোজার সঙ্গীতায়জনে নবীন শিল্পী তোশিবা ইসলামের গাওয়া ‘আইলারে নয়া দামান আসমানেরও তেরা/ বিছানা বিছাইয়া দেও শাইল ধানের নেড়া/দামান বও বও’।
লোক সুর ও সহজ কথার এই গানের সঙ্গে নেচে ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আপলোড করার হিরিক পড়ে যায়।সবচেয়ে বেশি ভাইরাল হয় করোনার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা তিন চিকিৎসকের এই গানে নাচের ভিডিও। এর পরই আলোড়ন তোলা এই গানের উৎসের অনুসন্ধান চালায় সিলেটটুডে। ‘নয়া দামানের’ উৎসের সন্ধানে’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে সিলেটের প্রবীন শিল্পী, সংগীতজ্ঞ, সংগীত গবেষকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ হয়। তবে কেউই এই গানের গীতিকারের নাম জানাতে পারেননি। এটিকে লোকগান হিসেবেই অভিহিত করা হয়। যদিও অনেকেই দাবি করেন, গানটি লোককবি দিব্যময়ী দাসের লেখা। তবে দিব্যময়ী দাসের মেয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত সঙ্গীত শিল্পী সুষমা দাস জানিয়েছিলেন, এই গানটি তার মায়ের লেখা বলে তার জানা নেই। এরপর আরও অনেকেই গানটির উৎসের সন্ধানে অনুসন্ধান ও গবেষণা চালান। তবে কেউই গানের গীতিকার সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
সিলেটে মন্দিরে হামলা : কুমিল্লার হামলার জেরে সিলেটনগরী সহ জেলার বিভিন্ন স্থানে একাধিক মন্দিরে হামলা চালানোর ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে জকিঞ্জের কালিগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল বের করে একদল লোক। এতে পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। আহত হন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন। এ ঘটনায় সাড়ে ৪ শ’ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ। এই ঘটনার জেরে সিলেট বিভাগের ৬টি উপজেলায় বিভিন্ন পূজা ম-পে হামলা, ভাংচুর করা হয়। হামলা করা হয় পুলিশের উপরও। এসব ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা আসামি করা হয়েছে অন্তত ১৬শ’ জনকে। বিপুল সংখ্যক লোককে আসামি করা হলেও এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে মাত্র ২১ জনকে। সিলেটে টানা তিনদিনে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে বিভাগের অন্তত ১৭ টি ম-প ও মন্দিরে। নগরের আখালিয়ার হালদারপাড়ায় ভাটি বাংলা অগ্রদূত যুব সঙ্গের দুর্গা পূজার ম-পে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।
চেম্বার নির্বাচনে নাটকিয়তা : সিলেটে ব্যবসায়ীদের সর্ববৃহৎ সংগঠন সিলেট চেম্বার অব কমার্স এর নির্বাচনে দুটি প্যানেলে সমান সংখ্যক পরিচালক নির্বাচিত হয়। এই ঘটনায় প্রেসিডিয়াম পদ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এই নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় নির্বাচন পরবর্তী বোর্ডে বিভক্তির অভিযোগসহ নানা নাটকিয়তার মধ্যদিয়ে সিলেটের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন সিলেট চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচনে বিজয়ী দায়িত্বগ্রহন করেন।
ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে তুলকালাম : টাকার বিনিময়ে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়ার অভিযোগ তুলে তা বাতিলের দাবি জানান পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। এনিয়ে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন পদবঞ্চিতরা। পাশাপাশি কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট এবং বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেন তাঁরা। কমিঠি গঠন নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠে । এই ঘটনায় বেশ কয়েকদিন উত্তপ্ত ছিল সিলেটের রাজনৈতিক মাঠ।
বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ : ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্যদিয়ে সারা দেশে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উদযাপন হয়েছে। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে সিলেট বিভাগের চার জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
বছরের শেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্ছ্বাস : ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের শেষ প্রান্তিকে এসে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বছর শেষে সীমিত পরিসরে ক্লাসে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা। মাধ্যমিকে কয়েকটি বিষয়ে বার্ষিক পরীক্ষায় অংশও নিয়েছে তারা। তবে পরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া দাবির আন্দোলন বছরের শেষভাগে উত্তাপ ছড়ায় রাজপথে। এ দিকে নতুন বছর শুরুর আগেই আবারো চোখ রাঙাতে শুরু করেছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন। এই কারণে ইতোমধ্যে আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত শিক্ষা খাতে স্বাভাবিক গতি ফিরছে না বলে আগেই সতর্ক করে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। অন্যদিকে ২০২১ সালেই প্রথম শুরু হয় গুচ্ছপদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা। একই বছরে বহু আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে উচ্চমাধ্যমিকে শিক্ষার্থীদের অটোপাস। ২০২১ সালের প্রথম দিকেই ২০২০ সালের বাতিল হওয়া এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফলাফলে দেয়া হয় অটোপাস। সেই ফলাফলে বিগত বছরের তুলনায় প্রায় তিনগুণ শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমানের ফলাফলে জিপিএ ৫ পেয়েছে। করোনার প্রভাবে বাংলাদেশে ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হলেও ২০২১ সালের নির্ধারিত এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ও গ্রুপভিত্তিক বিষয়ে। এ বছরই প্রথম তিনটি বিষয়ের ওপর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আর এই পরীক্ষা নেয়া হয়েছে ৫০ নম্বরের এবং সময়ও ছিলো অর্ধেক অর্থাৎ দেড় ঘণ্টা।
বিদ্রোহীদের হাতে নৌকার শোচনীয় পরাজয় : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চতুর্থ ধাপে এসেও ফলাফল বিপর্যয় ঠেকাতে পারেনি আওয়ামী লীগ। বিভাগের চার জেলার ৮১টি ইউপির মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাত্র ৩২টি ইউপিতে জয় পেয়েছেন। হেরে গেছেন বিপরীতে ৪৯টি ইউপিতে। এর আগে তৃতীয় ধাপে ৭৭টি ইউপির মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয় পেয়েছিলেন ৩১টিতে। চতুর্থ ধাপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের বিজয়ী ৩২ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে হবিগঞ্জে ১১ জন এবং সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে ৭ জন করে মোট ২১ জন রয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের ২৬ জন ‘বিদ্রোহী’ চেয়ারম্যান প্রার্থী জয় পেয়েছেন। এর মধ্যে সুনামগঞ্জে ৯ জন, মৌলভীবাজারে ৮ জন, সিলেটে ৫ জন এবং হবিগঞ্জে ৪ জন আছেন।
করোনাকালীন বিপর্যয় : মহামারির প্রকোপ শুরু হওয়ার পর সিলেটে অক্সিজেন, জরুরি ওষুধ, হাসপাতালে শয্যার অভাব দেখা দেয়। ভাইরাসটির সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় সিলেটের স্বাস্থ্যসেবা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। নানা সংকটে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। মৃত্যুপথযাত্রী অনেক রোগীর হাসপাতালেও ঠাঁই হয়নি। হাসপাতালগুলোকে করোনা রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে দেখা যায়। অনেকের অবস্থা গুরুতর হলেও হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। নিরুপায় বহু রোগী ঘরে চিকিৎসা নেন। হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। সংকট তৈরি হয় অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিয়েও। বহু চেষ্টায় কোনো হাসপাতালে শয্যা পেলেও রোগীকে নেওয়া হয় কঠিন কাজ। অ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষায় থেকে অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও আইসিইউ শয্যার জন্য সহায়তা চেয়ে করা পোস্টে ভরে ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো।
মেয়র- শ্রমিকদের সংঘর্ষ : গত ১৭ ফেব্রুয়ারী সিলেট নগরীর চৌহাট্টায় অবৈধ লাইটেস স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করতে অভিযান চালান সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ সময় কাউন্সিলরসহ সিসিকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। একপর্যায়ে পরিবহন শ্রমিকরা উচ্ছেদ অভিযানে বাঁধা দিয়ে মেয়র ও কাউন্সিলরদের সাথে বাকবিত-ায় জড়িয়ে পড়ে। পরে শ্রমিকরা দেশী-বিদেশী অস্ত্র নিয়ে মেয়র-কাউন্সিলর ও সিসিকের কর্মকর্তা কর্মচারীর উপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় সিটি কর্পোরেশন মামলা দায়ের করে।
এবিএ/০১ জানুয়ারি